ঝাড়- ফু তে কি কোনো কাজ হয়?

অনেকেই আমরা ঝাড় ফু নিয়ে কনফিউসনে থাকি, আসুন এ বিসয়ে কিছু কথা বলি। 

ঝাড়-ফু বলতে আমরা বুঝি কোন ইমাম/ পাদ্রি/ পুরহিত/ কবিরাজ বা পিরসাহের ইত্যাদি ব্যক্তির কাছথেকে হয়তো পানি পড়া, তাবিজ, নয়তো কিছু পাঠকরে রোগিতে ফূ দেন, এটাকেই আমরা ঝাড় ফু বুঝি। এই ঝাড় ফু কি কোনো কাজে আসে এ নিয়েই আলো চনা।
আমাদের চেতনা কিন্তু দুই ভাগে বিভক্ত- ১ কসাস মাইন্ড (চতন মন) ২সাব-কনসাস মাইন্ড (অবচেতন মন)
আমাদের মস্তিস্কের ৯৫% এর বেশী হলো সাব-কনসাস মাইন্ড বা অবচেতন মন । বাকী ৫% হলো সচেতন মন। অবচেতন মন বা সাব-কনসাস মাইন্ডটা কী: আপনার আমার মাঝে থাকা অবচেতন মন হলো খুবই শক্তিশালী বস্তু। অবচেতন মন প্রতি সেকেন্ডে ১০ কোয়াড্রিলিয়ন অপারেশন পরিচালনা করতে পারে আপনার অজান্তেই। এই মুহুর্তে কার কমান্ডে আপনার শরীরের ৬০ হাজার মাইল ব্লাড ভেসেলে রক্ত সরবরাহ করে যাচ্ছে সঠিক চাপে? হার্টবিটের মাধ্যেমে আপনাকে যে জীবন্ত রাখছে, আপনি তাকে কখনোই নির্দেশ দেননি? কে নিয়ন্ত্রন করছে আপনার শরীরের সঠীক তাপমাত্রা? আপনার শরীর একটু গরম হলে তার কমান্ডেই শরীর ঘাম বের করে দিয়ে আপনার শরীরকে ঠান্ডা রাখে। আবার আপনার শরীর একটু ঠান্ডা হলে সে শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে যায়। আপনার ৬০ ট্রিলিয়ন কোষে প্রতি মুহুর্তে অক্সিজেন সরবরাহ করে তাদের জীবন্ত রাখে এই সাব-কনসাস মাইন্ড। আপনি ঘুমালেও সে ঘুমায় না। সে জাগ্রত থেকে আপনাকে প্রতি মূহুর্তে জীবন্ত রাখে।এই অবচেতন মনে যত ধরনের তথ্য আছে সবকিছুকেই সে সঠিক বলে ধরে নেয়। আপনি বর্তমানে যে ধর্ম/অধর্ম মানেন, যে দল বা পার্টিকে সমর্থন করেন, যে পীরকে মানেন, যে বুদ্ধিজীবীকে মানেন তার বা তাকেই সঠিক বলে মনে হয়। আপনি নিরাকার খোদা মানেন না মূর্তিকে খোদা মানেন নিজের হাতে বানিয়ে, বা একটা পাথর খন্ডকে খোদা মানেন বা সাপ, অগ্নি, গরু, ঘোড়া, গাধা যাকেই খোদা বলে মানেন, বা আপনি কোন খোদাই মানেন না, আপনার কাছে সেটাই সঠিক বলে মনে হয়। কারন আপনার সাব-কনসাস মাইন্ড যা আপনার মস্তিস্কের ৯৫% বা তারও বেশী তা সত্য বা মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে পারেনা। সে জানে না কোনটা সঠীক আর কোনটা বেঠিক, সে পার্থক্য করতে পারেনা ভালো আর মন্দের মাঝে। ভালো মন্দ, সত্য মিথ্যা, সঠিক বেঠিক এর কিছুই আপনার সাব-কনসাস মাইন্ড বিচার করতে বা পার্থক্য করতে পারে না।
এই সাব-কনসাস মাইন্ড পার্থক্য করতে পারেনা আপনি যে দৃশ্য চোখে দেখেন বা যে দৃশ্য মনের মাঝে কল্পনা করেন। চোখ বন্ধ করে একবার ভাবুন আপনি গভীর রাতে এক ভয়ংকর জংগল দিয়ে হেটে যাচ্ছেন, দেখছেন কিছু অদ্ভুদ ভয়ংকর প্রাণীকে, ওরা ধীরে ধীরে হেটে আপনার খুব কাছেই চলে এসেছে। কি হলো? আপনার পুরো শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠবে, আপনার হার্টবিট বেড়ে যাবে। কারন ঐ যে, আপনার পুরো শরীরের নার্ভাস সিস্টেম (স্নায়ু)-কে এবং হার্টকে নিয়ন্ত্রণ করছে সাব-কনসাস মাইন্ড। আপনি কি সেই ভয়ংকর দৃশ্য দেখেছেন না কল্পনা করেছেন তা আপনার সাব কনসাস মাইন্ড পার্থক্য করতে পারেনা, সে সত্য বলেই ধরে নেয় যা আপনি কল্পনা করেছেন, তাই আপনার নার্ভাস সিস্টেম (স্নায়ু) ঝাঁকুনি দিয়ে আপনাকে সতর্ক করে দেয়। অলিম্পিকে দৌড়বিদরা এই জিনিসটা কাজে লাগিয়ে কল্পনা করে ট্রেনিং নেয়। আমেরিকাতে দৌড়বিদেরা এন্থনি রবিনসকে অনেক টাকা দিয়ে এই মানসিক ট্রেনিং নেয়।
এবার দেখুন প্লাসেবু এফেক্ট এবং নোসেবু এফেক্ট : শুধু একটা সুগার টেবলেট যার মধ্যে কোন ঔষধ নেই, তা বিশ্বাস করে খায় যে এটা খেলে আমার অসুখ সেরে যাবে। হ্যাঁ তার অসুখ সেরে গেছে। আবার আরেক গ্রুপকে যাদের অসুখের ঔষধ দিয়েও শুধু বিশ্বাস করে যে এই ঔষধ খেলে কিছুই হবেনা, পরে দেখা গেলো ঔষুধ খেয়েও তাদের কিছু হয়নি। এগুলোর উপর অনেক ধরনের এক্সপেরিমেন্ট হয়েছে। এজন্যে অনেক কুসংস্কার কাজ করে, পানি পড়া, তেল পড়া, মন্দিরের প্রাসাদ, গীর্জার চকলেট সবই চলে সাব-কনসাস মাইন্ডের উপরে। এজন্য বলা হয় যে বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর। আপনি যদি দুধ খাওয়ার সময় বলেন এই দুধ খেলে আমার বদ হজম হবে, পরে দেখা যাবে আসলেই আপনার বদ হজম হয়েছে। দ্যা পাওয়ার অফ ইউর সাব-কনসাস মাইন্ডবইতে ডঃ জোসেফ মরফি বিস্তারিত ভাবে লিখেছেন এ ব্যাপারে যে শুধু বিশ্বাস করে অনেক প্যারালাইসিস রুগী জাপানের শিন্ট ধর্মের মাঝারে গিয়ে সুস্থ হয়ে গিয়েছে।
হিপনোটিস্টরা বা সম্মোহনবিদ্যার লোকেরা কিভাবে কাজ করে? ম্যাক্সওয়েল মালটেজ তার বই সাইকো-সাইবারনেটিকসে লিখেছেন, রেসলিং খেলোয়াড়দের সম্মোহনকারী বলতো তুমি এই দুই কেজীর পাথর উঠাতে পারবেনা। পরে দেখা গেলো সে আসলেই দুই কেজীর পাথর উঠাতে পারছে না। কারন এটা নয় যে সে পারছেনা বরং সে বিশ্বাস করেছে সে পারবেনা তাই তার মাংসপেশী কাজ করছে না।
এবার আসি সচেতন মনেঃ সচেতন মন হলো ৫% এরও কম। সে ভালো মন্দের মাঝে পার্থক্য করতে পারে, সত্য মিথ্যার বিচার করতে পারে, কিন্তু ঐ যে ৯৫% সাব-কনসাস মাইন্ডকে ওভারপাওয়ার করতে পারেনা। এই ৫% মাইন্ড হলো মুক্তমন, সম্পূর্ন ফ্রী-থিংকিং মাইন্ড। তবে ৯৫% সাব-কনসাস মাইন্ডের কাছে সে পুরাই অসহায়। ডঃ ডেভিড ওয়াইনারের মতে মানুষ সচেতন মনে একটা সুঁইও টেবিল হতে উঠাতে পারে না।
এজন্যে এই পৃথিবীর সবাই পরিচালিত হয় সাব-কনসাস মাইন্ড দ্বারা। তাই একজন মানুষ কখন ইমাম, পাদ্রি, পুরহিত, কবিরাজ, বা পিরসাহেবের কছে কোন ব্যক্তি বা রুগি যায় সে হয়তো বিস্বাসের সাথে যায় বা মানুষেথেকে সুনে যায় উপরোক্ত লোকেরা রুগিকে যাই দিক না কেন সেটা যদি রুগি বিস্বাসের সাথে নেয় ও ব্যবহার করে তবে তার রোগ ৯০% ভালো হবার সম্ভাবনা রয়েছে, আর যদি বিস্বাস না থাকে তবে কাজ নাও হতে পারে ।তবে ভালো মন্দের হত কিন্তু উপর উয়ালার হাতে মানুষ তো কেবল উছিলা । আধুনিক সমাজে কিন্তু ফাড় ফু তে বিস্বাস কম / কম থাকাটাই স্বাভাবিক , আমি অনেক আধুনিক লোকেদের দেখেছি আধুনিক চিকিৎসায় ব্যর্থ হলে কিন্তু ঔ ব্যক্তি ফাড়-ফুক নিতে যান। এই ঝাড়-ফুক কে একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায়না কারন একসময় যখন আধুনিক চিকিৎসা ছিলোনা তখন কিন্তু ঝাড়-ফু বা কবিরাজি চিকিৎসাই ছিলো এক মাত্র মানুষের ভরসা।তবে কিছু অসৎ লোক ছিলো এখনো আছে থাকবে। চিকিৎসর নামে কত অসাধু ব্যক্তিরা এখনো আমাদের সমাজে আছে, এগুলো আগেও ছিলো  এখনো আছে থাকবে , আমি ঝাড় - ফু নেব কি নেবো না আমার বিসয়।

Comments