শয়তান কে? শয়তান দেহের বাহিরে না কি ভিতরে? আমাদের জানার দরকার।



মানুষ সব সময় মনে করে যে, শয়তান বাহিরে থাকে এবং এই বাহিরে থাকার ধারণাটিই ইসলামকে বোঝার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মানুষ ভাবতেই চায় না যে শয়তান তার অন্তরেই লুকিয়ে আছে। শয়তান নানা সভ্যতার জাগতিক পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। বাধা হয়ে দাঁড়ায় যখন আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় ধ্যান সাধনায় মশগুল হতে চায়। আল্লাহর রহস্য জানবার পথে সাধকের প্রতিটি ধাপে ধাপে চলে প্রচন্ড বাধা।

শয়তান কিছুতেই সাধককে শেষ লক্ষ্যে যেতে দিতে চায় না। বার বার বাধা হয়ে দাঁড়ায় অনেক রকম অস্ত্র হাতে নিয়ে। তাই সাধককে সবসময় শয়তানের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়। এই যুদ্ধরত অবস্থারটির নাম হল নফসে লাউয়ামা। সাধক যখন সবরকম বাধা একে একে পার হয়ে যায়, তখনই সাধক শান্ত হয়ে যায় এবং পরিপূর্ণ তৃপ্ত পায়। পরিতৃপ্ত অবস্থানটির নাম নফসে মোতমায়েন্না বা প্রশান্ত আত্মা। এখানে আর শয়তানের কোন কাজ-কর্ম বা তাবেদারী চলে না। সাধক যখন এই অবস্থানে আসতে পারে, তখন জান্নাতের বার্তাটি দেখতে পায় এবং তৃপ্ত হয়। 

সুতরাং জিহাদ দুই প্রকার একটি শরিয়তি জিহাদ, অপরটি হাকিকতি জিহাদ। আপনার ভেতরে লুকিয়ে থাকা খান্নাসরূপী শয়তানের বিরূদ্ধে জিহাদ হল ফিছাবেলিল্লাহ তথা আল্লাহর পথে। তবুকের যুদ্ধে জয়লাভ করার পর মহানবী (সঃ) সাহাবিদের বলেছিলেন, এবার তোমরা আসল জিহাদের দিকে অগ্রসর হতে চেষ্টা কর। সুতরাং আমরা দেখতে পাই ইসলামের বিষয়গুলোর দুটি দিক আছে। একটি বাহিরের দিক অপরটি ভিতরের দিক। বাহিরের দিকটির কম বেশী ধ্যান ধারণা থাকলেই ভিতরের দিকটি কম বেশি ধরা পড়তে বাধ্য। তাই এটা বোঝার শক্তির আদান প্রদান হলে জ্ঞান ও রহস্যলোকের বিষয়গুলো সাধারণ মানুষ বুঝতে না পারলেও অস্বীকার করবে না। রহস্যলোকের ভেদ রহস্য তো নিজ দেহে অবস্থান করে। এই মারেফতি জ্ঞান গোপন। গোপনটিকে মহান আল্লাহ সবার কাছে প্রত্যক্ষভাবে তুলে ধরেন না। 

আল্লাহর বিশাল সৃষ্টি জগতের মাঝে কোথাও সামন্য ভুল নাই এবং থাকতে পারে না। মানুষের প্রবৃত্তির একটি অংশ এক লাফে আল্লাহতে গিয়ে মিশতে চায়। কিন্তু মাধ্যমটিকে জঞ্জাল মনে করে। তবে মাধ্যম ছাড়া কোন কাজ সিদ্ধ হয় না। মাধ্যমের ভিতর দিয়ে আসল ধরা পড়ে। মারেফতের জগতে পৌঁছাতে হলে কামেল মুর্শিদের শরণাপন্ন হওয়া অপরিহার্য, কারণ খান্নাসরূপী শয়তান অন্তরের ভিতরে জাগিয়ে তোলে।

মানুষ কখনোই স্বেচ্ছাচারী কারো মাধ্যম নিতে চায় না। তাই গুরুর গোলামীর কথাটি বললেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন। 

খান্নাসই নিজের ভিতর এই আক্রমণাত্মক ভূমিকা পালন করে। অথচ মানুষ খান্নাসকে দেখতে পায় না। তাই জীবন্ত শয়তানের পরিচয় জেনে নিতে হয়। তা না হলে ইসলামের কিছুই সঠিকভাবে বোঝার উপায় থাকে না। সূফীবাদ বোঝার তো প্রশ্নই আসে না। 

সূফীবাদকে বুঝতে হলে কামেল মুর্শিদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করলেই কেবল তা বুঝে আসবে।

Comments